কম খরচে ইউরোপ ভিসা পাওয়ার উপায়
কম খরচে ইউরোপ ভিসা- ইউরোপ কথাটির নাম শুনলে প্রথমেই মাথায় আসে কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানী, আমেরিকা ইত্যাদি দেশগুলোর কথা। উচ্চশিক্ষা কিংবা কর্মের তাগিদে সবার পছন্দের তালিকায় শুরুতেই থাকে ইউরোপের দেশগুলো। তাই আজকে আমরা কম খরচে ইউরোপ ভিসা নিয়ে কোন দেশে যাওয়া যায়, আমাদের বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে যাওয়ার নিয়ম বা উপায়, কম খরচে ইউরোপ স্টুডেন্ট ভিসা, ইউরোপের কোন কোন দেশে যেতে ঠিক কত টাকা লাগবে, ইউরোপ ভিসা এজেন্সি, ইউরোপে যাওয়ার বয়স ও ILTS ছাড়া কম খরচে ইউরোপ ভিসা নিয়ে ইউরোপের দেশগুলোতে কিভাবে যাব এই বিষয়গুলো সম্পর্কে আলোচনা করবো।
প্রিয় পাঠক যদি আপনি ইউরোপের যেকোন একটি দেশে যেতে চান, তবে আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি চেষ্টা করবেন অবশ্যই খুব মনোযোগ সহকারে পড়ার। কারণ আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যম আমরা ইউরোপ ভিসা সংক্রান্ত সকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাই আর দেরি না করে, কম খরচে ইউরোপ ভিসা নিয়ে ইউরোপের কোন দেশে যাওয়া যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।
কম খরচে ইউরোপ ভিসা নিয়ে কোন দেশে যাওয়া যায়
আসলে ইউরোপের দেশগুলো যেন আমাদের কাছে একটি স্বপ্নের মতো। কেননা ইউরোপের ভিসা অতি সহজে পাওয়া যায় না। এ ভিসা যেন একটি সোনার হরিণ।তাছাড়াও ইউরোপের জন্য ভিসা করতে আপনাকে অনেক টাকা খরচ করতে হবে। কিন্তু আপনি জানলে খুশি হবেন বর্তমানে ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে কম খরচে ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
ইউরোপের দেশগুলোতে যারা ভ্রমণ কিংবা পড়াশোনার জন্য যেতে চাচ্ছেন,তাদের জন্য সুবোর্ণ সুযোগ রয়েছে। কারন ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ এখন ভিসা সহজ করে দিয়েছে। আপনাদের মধ্যে অনেকেই হয়ত ইউরোপের দেশগুলোতে ভ্রমণ করতে চাচ্ছেন কিংবা কাজের জন্য ইউরোপ যেতে চাচ্ছেন। আর তাই কম খরচে ইউরোপ ভিসা নিয়ে ইউরোপের কোন দেশে যাওয়া যায় তা জানতে চাচ্ছেন। তাহলে প্রিয় পাঠক আপনারা চাইলে ইউরোপের নিম্নক্ত দেশগুলোতে কম খরচে ইউরোপ ভিসা নিয়ে খুব সহজেই যেতে পারবেন।
মালটা:যারা কম খরচে ইউরোপ ভিসা নিয়ে যদি ইউরোপের কোন দেশে যেতে চায় তাহলে তাদের জন্য প্রথম অবস্থাতেই যে ইউরোপের দেশটি রয়েছে সেটি হল মালটা। ইউরোপের এই দেশটিতে আপনি যেকোন কাজের ভিসা ছাড়া টুরিস্ট ভিসা নিয়েও যেতে পারবেন। আর বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে অনেক শ্রমিক মালটায় সিজনাল কিংবা ননসিজনাল ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য আবেদন করছে। তাছাড়া ভ্রমণ পিপাসু যারা বিদেশ ভ্রমন করতে পছন্দ করে তারাও কিন্তু মালটা দেশ ভ্রমণ করতে চায়। কারণ ইউরোপের মালটা নামক এ দেশটি বেশ কয়েকটি দ্বীপের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে। আর এইসব দিপগুলো দেখার জন্য প্রতিবছরই অনেক মানুষ মালটা ভ্রমন করে।
নেদারল্যান্ড :কম খরচে ইউরোপ ভিসা নিয়ে ইউরোপ যাওয়ার মত দেশ গুলোর মধ্যে নেদারল্যান্ড আরেকটি অন্যতম ইউরোপীয় দেশ। কারণ নেদারল্যান্ডের ভিসা পেতে হলে আপনাকে বেশি শর্ত মানতে হবে না। এছাড়াও এ দেশটিতে ভিসা নিয়ে প্রবেশের জন্য বেশি টাকা খরচ করতে হবে না। তাছাড়া বাংলাদেশ থেকে যারা উচ্চশিক্ষার জন্য যেতে চায় এবং যারা নেদারল্যান্ডে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করবে, তাদের জন্য আছে সুবর্ণ সুযোগ। কেননা শুধুমাত্র ইউরোপের এই একটি দেশেই স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়া একদম সহজ।
সুইজারল্যান্ড: ভ্রমণ করার মধ্যে যে কয়েকটি দেশ আছে তারমধ্যে একটি সুন্দরতম দেশ হলো সুইজারল্যান্ড। সুইজারল্যান্ড ভ্রমণ করার জন্য একটি সুন্দর দেশ। ভ্রমণ করতে যারা অনেক ভালোবাসেন তারা প্রতিবছর বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করে থাকে, আর সেসব মানুষদের পছন্দের তালিকায় প্রথমেই থাকে সুইজারল্যান্ড। কারন ইউরোপের এ দেশটিতে এমন কিছু স্থাপনা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রয়েছে, যেগুলো দেখার জন্য মানুষ লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করতে রাজি। তবে আপনি চাইলে স্বল্প খরছে এখানে আসতে পারবেন এবং সুইজারল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন।
পর্তুগাল : পর্তুগাল দেশটির নাম শুনলেই মাথায় প্রথমে আসে ফুটবলের কথা। কারন ফুটবল খেলার জন্য বিখ্যাত পর্তুগাল। কিন্তু কম খরচে ইউরোপ ভিসা নিয়ে পর্তুগালে আসতে চাইলে আপনি বাংলাদেশ থেকে পর্তুগাল ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
ফ্রান্স: অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিকভাবে বেশ শক্তিশালী দেশ ফ্রান্স। ফ্রান্সের দেশের কথা আসলেই কিন্তু শক্তিশালী ফুটবল টিমের কথা মনে পড়ে। কারণ বিশ্বে ফুটবল খেলার জন্য বেশি পরিচিত একটি দেশ ফ্রান্স। বর্তমানে স্বল্প খরচে ফ্রান্সে আপনি স্টুডেন্ট ভিসা ও টুরিস্ট ভিসা নিয়ে আসতে পারবেন।তবে যারা কাজের ভিসা নিয়ে আসতে চাচ্ছেন তাদের জন্য ভিসা পাওয়া একটু কঠিন হয়ে যায়। তবে ফ্রান্সে পর্যটকদের জন্য ফ্রান্স ভিসা পাওয়া অনেক সহজ।
বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ যাওয়ার নিয়ম বা উপায়
প্রিয় পাঠক আপনারা ইতিমধ্যে কম খরচে ইউরোপ ভিসা নিয়ে কোন কোন দেশে যাওয়া যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এখন হয়তো আপনাদের মনে প্রশ্ন উঠেছে কিভাবে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের দেশগুলোতে যাবেন। এবং যেতে কি কি প্রয়োজন।
সেক্ষেত্রে ইউরোপের দেশগুলোতে যাওয়ার জন্য সর্বপ্রথম আপনার একটি বৈধ পাসপোর্ট প্রয়োজন হবে। এবং সেটির অবশ্যই মেয়াদ থাকতে হবে। এরপর আপনাকে সরকারি ভাবে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। আপনি চাইলে সরকারি এজেন্সি বোয়েসেলের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন। তবে দালালের চক্করে ভুলেও পা বাড়াবেন না। তাছাড়া উক্ত দেশগুলোতে যদি আপনার কোন বন্ধু বান্ধুব কিংবা আত্মীয়স্বজন থাকে তাদের মাধ্যমেও ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এবং টুরিস্ট ভিসার জন্য বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে যোগাযোগ করে আবেদন করতে পারবেন।
কম খরচে স্টুডেন্ট ভিসা
উপরোক্ত দেশগুলোতে আপনি চাইলে কিছু কম খরচেও সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এখন প্রশ্ন হলো কিভাবে প্রসেসিংটা করবেন? তো সর্বপ্রথম যে দেশে আপনি উচ্চশিক্ষার জন্য যেতে চান সে দেশটির আর্থ সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে আপনাকে ভালোভাবে ধরণা নিতে হবে। এরপর সংশ্লিষ্ট দেশের যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চান সেখানকার পরিবেশের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার যোগ্যতাটাও আপনাকে তৈরি করতে হবে। এরপর উক্ত বিশ্ববিদ্যালয় আপনাকে ভর্তির প্রাথমিক অনুমতি জানিয়ে যে চিঠি দিবে তা হলো অফার লেটার। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রদত্ত অফার লেটারটি প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে বার বার পড়তে হবে।আপনাকে ভালভাবে জেনে নিতে হবে টিউশন ফির পরিমাণসহ অন্যান্য বিষয়গুলো সম্পর্কে।
এরপর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার পরে তাদের পাঠানো যে অফার লেটারটি আছে সেটি ভর্তির অনুমতিপত্রে উল্লেখিত ডেডলাইনের মধ্যেই প্রতিষ্ঠানে পৌছাতে হবে। সঠিক সময়ে তা না পাঠালে ভর্তি বাতিল হয়ে যাবে। ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে বিভিন্ন নিয়ম থাকলেও প্রায় সব দেশের ভর্তি প্রক্রিয়ার নিয়মই এক রকম। যেকোন দেশে ভিসা পেতে হলে সবার প্রথমে সে দেশের ভিসার আবেদনপত্রটি সংগ্রহ করতে হয়।
তবে কখনো কখনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই ভিসার আবেদনপত্র সরবরাহ করে থাকে। আর যদি তা না হয় তবে নির্দিষ্ট যে দূতাবাস আছে সেখান থেকে ভিসার আবেদনপত্র সংগ্রহ করে সঠিক তথ্য দিয়ে নির্ভুল ভাবে তা পূরন করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্রাদী দূতাবাসে জমা দিতে হবে।তারপর একটি নির্দিষ্ট দিনে ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে ভিসা সংগ্রহ করতে হবে।
ইউরোপের কোন দেশে যেতে কত টাকা লাগবে
ইউরোপের কোন দেশে যেতে হলে ঠিক কত টাকা লাগবে এটি চাইলে আপনি অনলাইনে যাচাই করতে পারবেন। তবে উপরোক্ত দেশগুলোতে যেতে আনুমানিক আট থেকে নয় লক্ষ টাকার মত লাগতে পারে। তবে দালালের খপ্পরে পড়লে তারা আপনার থেকে দশ থেকে পনেরো লক্ষ টাকা নিয়ে যেতে পারে।
ইউরোপের কোন দেশে যেতে বয়স কেমন লাগে
আসলে এখানে ইউরোপের দেশগুলোতে যেতে বয়স কোন ব্যপার নয়। তবে যারা উচ্চ শিক্ষা অর্জনের জন্য যাবে তাদের কখনো কখনো একটি নির্দিষ্ট বয়সসীমা বেঁধে দেওয়া হয়। তাছাড়া বোয়েসেল এর মাধ্যমে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে যে সরকারি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি গুলো আসে সেখানে নির্দিষ্ট একটি বয়স সীমা থাকে আবেদনের জন্য। এছাড়া তেমন কোন প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া টুরিস্ট ভিসায় ইউরোপের দেশগুলোতে যেতে চাইলে যেকোনো বয়সের কেউ যেতে পারবে।
ILTS ছাড়া ইউরোপের কোন কোন দেশে যাওয়া যায়
ইউরোপের যে দেশ গুলো আছে তার মধ্যে এমন অনেকগুলো দেশ আছে যেখানে কোনো রকম IELTS ছাড়াই যাওয়া যাবে। তবে আপনি যদি বাংলাদেশেই নুন্যতম ৪ বছর ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে থাকেন তাহলে আপনার জন্য তেমনকোনো প্রব্লেম হবে না। চাইলে আপনি মিডিয়াম অফ ইন্সট্রাকশন দিয়ে খুব সহজেই ভিসার জন্য আবেদব করতে পারবেন। কিন্তু যদি আপনার ঈএল্টশ করা থাকে তাহলে আপনার অস্ত্রের ধার টা একটু বেশি হলো এই আরকি! তবে এই IELTS ছাড়াও কিন্তু ইউরোপের বেশ অনেকগুলো দেশেই যাওয়া যাবে। তাহলে চলুন দেখে নেই IELTS ছাড়া কোন কোন দেশে যাওয়া যাবে –
নন সেনজেনভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে বুলগেরিয়া, ক্রোয়েশিয়া,রোমানিয়া, সার্বিয়া। এই দেশগুলোতে অনায়াসেই IELTS ছাড়া আপনি যেতে পারবেন।
এবার আসি সেনজেনভুক্ত দেশগুলোতে। ইউরোপের সেনজেনভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে আপনি পোল্যান্ড, ইতালি, মালটা, গ্রিস,পর্তুগাল,ফ্রান্স, হাঙ্গেরি এই দেশগুলোতে IELTS ছাড়াও ভিসা নিয়ে যেতে পারবেন।
পরিশেষে কিছু কথা
প্রিয় পাঠক এই ছিল আজকের কম খরচে ইউরোপ ভিসা নিয়ে কোন দেশে যাওয়া যায় ও বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের দেশগুলোতে যাওয়ার উপায় সমূহ। আপনারা চাইলে বাংলাদেশ থেকে উপরোক্ত যএ দেশগুলোর কথা উল্লেখ করেছি সেখানে খুব সহজে ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন। এবং যারা ভ্রমণ করতে চাচ্ছেন তারা চাইলে আবেদন করতে পারেন। তবে সাবধান! দয়া করে কেউ দালালের ফাঁদে পা দিবেন না।