সাইপ্রাস ভিসা পাওয়ার উপায়।সাইপ্রাস বেতন কত
সাইপ্রাস ভিসা– প্রিয় পাঠক! কেমন আছেন সবাই? আশা করি অনেক ভালো আছেন। আমাদের আজকের আর্টিকেলের মূল বিষয় হলো সাইপ্রাস ভিসা। অর্থাৎ আজকে আলোচনা করব সাইপ্রাস ওয়ার্ক পারমিট ভিসা, সাইপ্রাস যেতে কত টাকা লাগবে,ইউরোপ সাইপ্রাস কাজের ভিসা, সাইপ্রাসের টাকার মান, সাইপ্রাস ভিসা চেক করার নিয়ম ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত। তাই যারা সাইপ্রাস ভিসা নিয়ে যেতে চান তারা অবশ্যই আর্টিকেলটি মনযোগ সহকারে পড়বেন। তো চলুন শুরু করা যাক।
প্রথমেই আসি সাইপ্রাস কেমন দেশ? মুলত সাইপ্রাস একটি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভুক্ত দেশ। তবে এটি সেনজেনভুক্ত দেশ নয়। মুলত সাইপ্রাস দুই ভাগে বিভক্ত। একটি হচ্ছে তুর্কি সাইপ্রাস। ও অপরটি হচ্ছে গ্রীক সাইপ্রাস। এখন অনেকেই স্টুডেন্ট ও কাজের ভিসা নিয়ে সাইপ্রাস ঢুকছে। আর বাকি ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর তুলনায় এখানে যাওয়া বেশ সহজ হওয়ায় এখন অনেকেই সাইপ্রাস ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে বিভিন্ন দেশ থেকে যাচ্ছে।
সাইপ্রাস ওয়ার্কপারমিট ভিসা
জীবিকার তাগিদে আপনি চাইলে সাইপ্রাসে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে আসতে পারেন। সাইপ্রাস ভিসা মুলত দুই ধরনের হয়। একটি হলো সিজনাল ও আরেকটি হল নন সিজনাল। সিজনাল যে ভিসা আছে সেগুলো মূলত পার্মানেন্ট ভিসা না।অর্থাৎ সিজনাল ভিসার মেয়াদ সাধারণত ছয় থেকে নয় মাসের মত কিংবা এক বছরের মত হয়ে থাকে এবং তারপর ভিসার মেয়াদ শেষ হলে কিংবা মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে কোম্পানি থেকে লোক ছাটাই করে দেওয়া হয়।
অর্থাৎ সাইপ্রাসে এমন কিছু কোম্পানি থাকে যারা সিজনাল ভিসায় লোক নিয়োগের একটি অফার লেটার দেয়।সেখানে লিখা থাকে ভিসার মেয়াদ। এবং যারা সিজনাল ভিসা নিয়ে সাইপ্রাসে যায় তারা মূলত ছয় থেকে নয় মাসের কন্ট্রাকে যায় ও ৬ থেকে ৯ মাস ওই কোম্পানির অধীনে কাজ করার পর তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায় এবং তারা সাইপ্রাসে আবার অবৈধ হয়ে যায়। আর নন সিজনাল ভিসা মূলত স্থায়ী ভিসা। অর্থাৎ এই ভিসা সাধারণত স্থায়ী হয়ে থাকে এবং এই ভিসার মেয়াদ দুই থেকে চার বছরের মত হয়ে থাকে এবং ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে পুনরায় রিনিউ করা যায়।
আপনি সাইপ্রাসে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে এসে যে কাজগুলো করতে পারবেন তার মধ্যে কয়েকটি কাজ হলো বিভিন্ন ফার্মে। অর্থাৎ বিভিন্ন খামারে। যেমন ঘোড়ার খামার, গরুর খামার, কুকুরের খামার কিংবা মুরগীর খামারে। তাছাড়া আপনি যদি কৃষি ভিসায় ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে আসেন তবে আপনাকে বিভিন্ন ফসলী জমি কিংবা ফল বা ফুলের বাগানে কোম্পানি কাজ দিবে। তাছাড়া ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে আসলে আপনাকে ৭০ বছরের বৃদ্ধ কেও দেখাশোনার কাজ করতে হতে পারে।
তাছাড়া বিভিন্ন হোটেলেও চাইলে আপনি কাজ করতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে কিছু শর্ত থাকে যেমন, আপনাকে অবশ্যই ইংরেজিতে পারদর্শী হতে হবে এবং হোটেলের যে সকল কাজ রয়েছে সে কাজগুলোর উপর অবশ্যই পারদর্শী হতে হবে। মূলত সাইপ্রাসে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে আসলে আপনি এই কাজগুলোই করতে পারবেন।
ইউরোপ সাইপ্রাস কাজের ভিসা
প্রথমে আপনাদেরকে একটি কথা বলে রাখা ভালো সাইপ্রাস কিন্তু দুটো অংশে বিভক্ত। তুর্কি সাইপ্রাস ও গ্রিক সাইপ্রাস। এই গ্রিক সাইপ্রাসই মুলত ইউরোপ সাইপ্রাস। এবং ইউরোপ সাইপ্রাসে যারা অর্থ উপার্জনের জন্য আসতে চান তাদের মধ্যে সবচেয়ে সুবিধা ভোগ করতে পারে স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে যারা আসে। সাইপ্রাস ভিসা অর্থাৎ স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে যারা গ্রিক সাইপ্রাসে আসেন তাদেক কাজের ব্যবস্থা খুব সহজেই হয়ে যায়৷ এবং তারা চাইলে চারটি ক্যাটাগিরীতে খুব সহজেই কাজ করতে পারে। সেগুলো হল পেট্রল পাম্প স্টেশন,রেস্টুরেন্ট ক্লিনার, ফুড এন্ড প্রডাক্ট ডেলিভারি ও ড্রাইভিং।
সাইপ্রাসের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়া অবস্থায় যে শর্তগুলো থাকে তার মধ্যে সেখানে উল্লেখ থাকে যে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার পাশাপাশি এ কাজগুলো পার্টটাইম হিসাবে করতে পারবে।তবে এটি শুধু কাগজে-কলমে উল্লেখ্য থাকে। মূলত যারা সাইপ্রাসে স্টুডেন্ট ভিসায় আসে, তারা ফুল টাইমে কাজগুলো করে। তাছাড়া এ কাজগুলোর পাশাপাশি কনস্ট্রাকশন সাইট এবং অন্যান্য কাজও স্টুডেন্টদের করতে দেখা যায়। এবং এতে করে তার মোটামোটি ভালোই অর্থ উপার্জন করে। আর যারা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে ইউরোপ সাইপ্রাসে আসে তারাও চাইলে এই কাজগুলো করতে পারে।
সাইপ্রাস থেকে অন্য দেশে যাওয়া
আপনি চাইলে সাইপ্রাস থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সেনজেনভুক্ত যেকোনো একটি দেশে খুব সহজেই যেতে পারবেন।এক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে যারা সাইপ্রাসে স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে গিয়েছে তাদের জন্য এটি বেশ সহজতর হবে। কারন সাইপ্রাস ভিসা নিয়ে যারা সাইপ্রাস যান এবং সেখান থেকে ইউরোপের সেনজেনভুক্ত কোন দেশে প্রবেশ করতে চান তবে অবশ্যই দুটি কার্ডের মাধ্যমে প্রবেশ করতে পারবেন। কার্ডগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে পিঙ্ক কার্ড (pink card) ও একটি হচ্ছে ইয়েলো কার্ড (yellow card). স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে যারা সাইপ্রাসে যায় তারা গোলাপি কার্ডের জন্য এপ্লাই করার পর খুব সহজেই এটি পেয়ে যায় এবং সেই কার্ড দ্বারা তারা দেশগুলোতে খুব সহজেই ইউরোপের বাকি দেশগুলোতে খুব সহজেই প্রবেশ করতে পারে।
যারা হলুদ কার্ড বা ইয়েলো কার্ডের জন্য আবেদন করতে চায় তারা প্রথমে টুরিস্ট ভিসা নিয়ে সাইপ্রাসে যেতে হবে। এবং তারপর সেখানকার সেনজেনভুক্ত কোন ইউরোপীয় নারীকে বিয়ে করে এই কার্ডের জন্য আবেদন করবে। এবং খুব সহজেই ইয়েলো কার্ড পেয়ে যাবে। এটি হলো ইয়েলো কার্ড পাওয়ার শর্ত। আর এই ইয়েলো কার্ড দিয়ে খুব সহজেই তিনি ইউরোপের যেকোনো দেশ যেমন রোমানিয়া, বুলগেরিয়া, জার্মানি ইত্যাদি দেশগুলোতে অনায়াসে প্রবেশ করতে পারবে। তাই যারা সাইপ্রাস ভিসা নিয়ে সাইপ্রাসে আসতে চায় তাদের জন্য স্টুডেন্ট ভিসা ও ভ্রমণ ভিসাই সেরা।
সাইপ্রাস ভিসা চেক করার নিয়ম
সাইপ্রাস ভিসা চেক করার সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হলো গুগলে গিয়ে সাইপ্রাস লিখার পর তার সাথে ভিসা চেক লিখে সার্চ দিবেন। তবে অবশ্যই ইংরেজিতে চার্চ দিবেন। এরপর স্পবার প্রথমে যেই ওয়েবসাইট আসবে সেখানে Visa Chek অপশনটি খুঁজুন। এরপর একটি ফরম হয়তো শো করবে। সেখানে আপনার ভিসা নাম্বার ও পাসপোর্ট দিলে খুব সহজেই আপনি আপনার ভিসার সকল তথ্য পেয়ে যাবেন।
সাইপ্রাস ভিসা চেক করার লিংক : http://www.moi.gov.cy/moi/moi.nsf/index_gr/index_gr?OpenDocument
তবে বিভিন্ন দেশের ইমিগ্রেশন এক এক রকম হওয়ার কারনে অনেক সময় এই পদ্ধতিটি কাজ করতে নাও পারে। সেক্ষেত্রে আপনি আপনার নিকটস্থ যে কম্পিউটারের দোকানটি রয়েছে সেখানে গিয়েও ভিসার নাম্বার ও পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে সকল তথ্য পেতে পারেন।
সাইপ্রাস যেতে কত টাকা লাগে
সাইপ্রাস ভিসা নিয়ে গ্রিক সাইপ্রাস বা তুর্কি সাইপ্রাস যেতে কত টাকা লাগে? এ প্রশ্নটি নিশ্চয়ই আপনাদের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। আসলে ভিসা অনুযায়ী টাকার পরিমাণটা নির্ধারন হয়। আসলে যারা স্টুডেন্ট ভিসায় সাইপ্রাস যেতে চান তাদের খরচ পরবে ৫ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। আর এই খরচ মুলত টিউশন ফি ও বিমানভাড়া সহ সকল খরচ মিলিয়ে। এবং যারা কাজের যারা ভিসা নিয়ে যেতে চান তাদের জন্য খরচ পরতে পারে ৬ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা। এবং ভ্রমণ ভিসায় এর চেয়ে কম। তবে দালালের হাতে পরলে আরও বেশি খরচ হবে।
তুর্কি সাইপ্রাস ১ টাকা বাংলাদেশের কত টাকা
লিরা হচ্ছে তুর্কি সাইপ্রাসের মুদ্রার নাম। এখানে তুর্কি প্রায় সাড়ে তিন লিরাতে হয় এক ইউরো হয়। সেই হিসাবে তুর্কি এক লিরা হবে বাংলাদেশের প্রায় ৩৩ টাকার সমান।
পরিশেষে কিছু কথা
যারা তুর্কি সাইপ্রাসে আসতে চান, তারা এখানে না আসলেই ভালো। কারন এখানে তেমন অবস্থা ভালো নয়। তাছাড়া যারা গ্রিক সাইপ্রাসেও আসতে চান তারাও অত ভালো উপার্জন করতে পারবেন না। কারন কাজের ভিসা নিয়ে আসলেও এখানে আপনি সর্বোচ্চ ৪০০-৬০০ ইউরোর মত টাকা পাবেন। যা এখন যে কেউ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বসেই অনায়াসে উপার্জন করছেন। তাছাড়া যারা ভাবেন ভ্রমণ ভিসায় সাইপ্রাসে এসে পরে পার্মানেন্ট হবেন তারাও বেশি সুবিধা করতে পারবেন না। হ্যাঁ তবে কেউ যদি ভ্রমণ ভিসায় এসে সাইপ্রাসের কোন মেয়েকে বিয়ে করেন তবে তিনি ইয়েলো কার্ড এপ্লাই করে ইউরোপের যেকোনো দেশে স্থায়ী হতে পারবেন।
অনেক দালাল চক্র আছে, যারা দশ থেকে বারো লক্ষ টাকার বিনিময়ে তুক্রি সাইপ্রাসের ভিসা দেয়। এবং পরবর্তীতে অনেকেই এই ফাঁদে পা দিয়ে নিজেদের সব হারায়। তাই এসব দালাল চক্রের হাত থেকে দূরে থাকবেন।