ব্যাংক ও ইন্সুরেন্স

একটি বাড়ি একটি খামার লোন পদ্ধতি

একটি বাড়ি একটি খামার লোন পদ্ধতি বা একটি বাড়ি একটি খামার থেকে কিভাবে লোন নিতে হয় এই নিয়ে অনেকের প্রশ্ন রয়েছে। আজকের পোস্টটিতে একটি বাড়ি একটি খামার লোন পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হবে ও একটি বাড়ি একটি খামারের আরো  অনেক বিষয় সম্পর্কে পোস্টটি পড়ে জানতে পারবেন। 

 

একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প কবে চালু হয়?

 

চাকরিপ্রবন তরুন সমাজকে চাকরির চিন্তাধারা থেকে বের করে নিয়ে এসে একটি স্বনির্ভর বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলো বর্তমান সরকার।যেই বাংলাদেশ হবে ক্ষুদামুক্ত ও দারিদ্রমুক্ত।যেখানে প্রত্যেকে হবে স্বনির্ভর আর স্বাবলম্বী।সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকার একটি উদ্যোগ গ্রহন করেছিলো।সাথে হাতে নিয়েছিলো একটি প্রকল্প।যা একটি বাড়ি একটি খামার নামে পরিচিত ছিলো।

 

বাংলাদেশ সরকার “একটি বাড়ি একটি খামার” প্রকল্প হাতে নেয় ২০০৯ সালে।প্রকল্পের মেয়াদকাল ছিলো ২০০৯ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত।এর ভিতরে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছিলো। ২০০৯ সালের নভেম্বর মাসে একনেক কর্তৃক এটি অনুমোদন করা হয়।কিন্তু পরে এই একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের মেয়াদকাল আরো এক বছর কমিয়ে আনা হয়।

 

২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের দারিদ্রতার হার ১০ শতাংশ কমিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকার এই 

প্রকল্প হাতে নেয়।বাংলাদেশের গ্রামিন জনগোষ্ঠিকে স্বাবলম্বী এবং অর্থনীতিকে গ্রামকেন্দ্রিক ভাবে ঢেলে সাজাতে সরকার এই প্রকল্প হাতে নিয়েছিলো।

 

একটি বাড়ি একটি খামার সরকারি না বেসরকারি?

 

“একটি বাড়ি একটি খামার” ছিলো বাংলাদেশ সরকারের সমবায় সমিতি ভিত্তিক একটি দীর্ঘমেয়াদী সামাজিক পরিকল্পনা।এই পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের প্রান্তিক গ্রামের মানুষজন।প্রতিটি গ্রামকে অর্থনৈতিক ভাবে উন্নত করতে এবং সেখানকার জনগোষ্ঠিকে স্বাবলম্বী করে তোলাই ছিলো এর প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

 

কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশের কৃষির উন্নয়ন যেন আরো বেগবান হয় এবং সে গতিধারা যেন বজায় থাকে সেটাও এই প্রকল্পের আওতায় ছিলো।কৃষির এক অপার সম্ভাবনা আমাদের এই বাংলাদেশ।কিন্তু সুষ্ঠ পরিকল্পনা কার্যকরি বাস্তবায়ন এবং সার্বিক সমন্বয়হীতায় এখনো কাঙ্ক্ষিত সীমানা রেখা স্পর্শ করতে পারেনি।সেই লক্ষ্যেই সরকার এই পরিকল্পনার আর প্রকল্প হাতে নিয়েছিলো।

 

একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের মেয়াদ?

 

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার প্রথম এই প্রকল্প হাতে নেয় ১৯৯৬ সালে।পরবর্তী সময়ে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে তা বন্ধ করে দেয়।আওয়ামী লীগের বর্তমান আমলে এটি আবার শুরু করা হয়।’একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পটি ২০০৯ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের জুন মাস মেয়াদে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালের নভেম্বর মাসে একনেক কর্তৃক অনুমোদিত হয়; কিন্তু পরবর্তীতে প্রকল্পের মেয়াদকাল এক বছর কমিয়ে আনা হয়।

 

দারিদ্রে বিমোচনের লক্ষ্যে সরকার এই প্রকল্প গ্রহন করলেও বরাদ্দের অভাবে এবং অন্যান জটিলতার কারনে সময়মতো এটি শেষ করা যায় নাই।সবশেষে ২০২০ সালের জুন মাস পর্যন্ত এর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিলো।খরচ বেড়েছিলো মুল খরচের প্রায় সাত গুন।মেয়াদ বাড়িয়ে এর ব্যয় ধরা হয়েছিলো ৮ হাজার ১০কোটি টাকা।করোনা মহামারীর আগে পর্যন্ত এই প্রকল্পের অগ্রগতি ছিলো ৭১.১০%।স্থানীয় মানবকে সম্পদে রুপ দেয়ার   লক্ষ্য নিয়ে শুরু হওয়া এই প্রকল্প স্বপ্ন দেখিয়েছিলো অনেক আশাহত মানুষকে।

 

পরিকল্পনা করা হয়েছিলো যে,প্রতিটি গ্রামের ৬০ জন(৪০ জন নারী এবং ২০ জন পুরুষ)দরিদ্র বা হতোদরিদ্র বা ভিক্ষুক পরিবার নিয়ে গ্রাম উন্নয়ন সমিতি গঠন করা হবে।ক্ষুদ্র সঞ্চয় পদ্মতিতে আত্মকর্মসংস্থানের জন্য নানা রকমের কর্মকান্ড পরিচালনা করবে এই সমিতি।সারা বাংলাদেশ থেকে ১লক্ষ ২০ হাজার সমিতি গঠন করে ৫৪ লক্ষ ৬০ হাজার পরিবারকে এই সমিতিতে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিলো।এবং প্রতি মাসে ২০০ টাকা করে সঞ্চয় রেখে তা ২ বছর পর্যন্ত সঞ্চয়ের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিলো।

 

সমিতির এক লাখ ৪৪ হাজার ১০০ জন সদস্যকে ভার্মিকম্পোস্টিং, ডিজিটাল আর্থিক ব্যবস্থাপনা, সমিতি ব্যবস্থাপনাসহ আরও কয়েকটি বিষয়ের ওপর এক দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয় প্রকল্পের শুরুতে।

 

এই প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের দারিদ্রতার হার ২০২১ সালের মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশতে নেমে আসবে বলে ধারনা করা হয়েছিলো।কিন্তু প্রতি বছর বরাদ্দের সমস্যা থাকার কারণে পরিকল্পনা অনুযায়ি এই প্রকল্পের কাজ সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় নাই।

 

২০০৯ সালে শুরুর সময় ৫ বছর মেয়াদের এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ১৯৭ কোটি টাকা। তিনবার সংশোধনে তা ৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকায় পৌঁছায়।

 

একটি বাড়ি একটি খামার লোন পদ্ধতি?

 

চাকরিভিত্তিক যুবসমাজকে উদ্যোক্তা তৈরির প্রয়াসে বাংলাদেশ সরকারে নেয়া একটি বাড়ি একটই খামার প্রকল্প সারা দেশে কিছুটা হলেও আশার আলো দেখিয়েছিলো।আসুন জেনে নেই একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের লোন পদ্মতি সম্পর্কে।

বাংলাদেশে এমন অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা রয়েছেন যারা অল্প মুলধনের অভাবে নিজের ব্যাবসা দাড় করাতে পারছেন না।তারাই প্রধানতো এই প্রকল্প থেকে লোন নিয়ে নিজের ব্যাবসা শুরু করতে পারেন।যেহেতু আমাদের দেশের সব উপজেলাতে এই ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প চালু রয়েছে তাই সহজেই আপনি এই লোন পেতে পারেন।এই প্রকল্প থেকে প্রথম পর্যায়ে আপনি ৫০ হাজার টাকা লোন নিতে পারেন।এই লোনের জন্য আপনি কাউকে ঘুষ দিতে হবে না। বা কোন প্রকারের কাগজপত্র জমা দেয়া লাগবে না।

 

প্রতিটি উপজেলাতে একজন এই প্রকল্পের একজন লোন কর্মকর্তা রয়েছেন।তাদের সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমার দেয়ার মাধ্যমে লোনের জন্য আবেদন করতে পারেন।সরকারী উপজেলা পরিষদ ছাড়া আর কোথাও এই প্রকল্প চালু নেই।তাই অন্য কারো সাথে এই ব্যাপারে যোগাযোগ করবেন না।

 

একটি বাড়ি একটি খামার লোন নেয়ার শর্তঃ

 

১.আবেদনকারীকে অব্যশই বাংলাদেশের নাগরীক হতে হবে।

২.আবেদনকারী প্রথম পর্যায়ে ৫০ হাজার টাকা লোন পাবেন

৩.লোন আবেদনকারীকে অব্যশই ভোটার আইডি কার্ড/পাসপোর্ট/ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতে হবে।

৪.লোন নেয়ার তিন মাস পর হতে কিস্তি প্রদান করতে হবে।

৫.প্রতি সপ্তাহে বা মাসে কিস্তি প্রদান করতে পারবেন।

৬.লোন নেয়ার ১৮ মাসের মধ্যে সব কিস্তি পরিশোধ করতে হবে।

 

উপরোক্ত শর্ত মেনে যে কেউ একটি বাড়ি একটি খামার লোনের আবেদন করতে পারেন।এখন অনলাইন থেকে এই আবেদন করা গেলেও সব থেকে ভালো হলো উপজেলাতে গিয়ে লোনের আবেদন করা।

 

 

বাংলাদেশের যে কোন ব্যাংক থেকে আপনি যদি লোন নেন তাহলে আপনাকে কিছু না কিছু সুদ প্রদান করতে হবে।একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প তাঁর ব্যাতিক্রম নয়।এই প্রকল্পেও অল্প পরিমান সুদ আপনাকে প্রদান করতে হবে।একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের লোনের পরিমান শতকরা ৮%।

 

একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প থেকে যদি আপনি লোন নেন তাহলে বেশকিছু সুবিধা পাবেন যা অন্যান ব্যাংকে আপনি পাবেন না।প্রথমতো আপনি এই লোন খুব সহজে নিতে পারবেন।আপনাকে লোন পরিশোধের সময় দেয়া হবে দেড় বছর বা ১৮ মাস।সেই সময়ের মধ্যে আপনি খুব সহজে টাকা পরিশোধ করতে পারবেন।আপনি চাইলে প্রতি সপ্তাহে বা মাসে কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে পারেন এবং লোন নেয়ার প্রথম তিন মাস আপনাকে কোন কিস্তি প্রদান করতে হবে না।এই সময়ের মধ্যে আপনি আপনার ব্যাবসা শুরু করতে পারেন নিশ্চিন্তে। একটি বাড়ি একটি খামার লোনের জন্য আপনাকে কোন প্রকার ঘুষ বা জামানোত দিতে হবে না।নিদিষ্ট নিয়ম মেনে উপজেলা লোন কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করলে একটি বাড়ি একটি খামার লোনের আবেদন করতে পারেন।তাছাড়া একটি বাড়ি একটি খামার লোন নিলে সুদের হার পড়বে মাত্র ৮%।

 

স্বাবলম্বী বাংলাদেশ গড়তে ক্ষুদ্র এবং মাঝারি ব্যাবসার কোন বিকল্প নাই।বেকারত্ব দূরীকরনে সব থেকে বড় ভুমিকা রাখতে পারে এই একটি বাড়ি একটি খামার লোন।নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার পাশাপাশি আরো অনেকের কাজের সু্যোগ হতে পারে এই একটি বাড়ি একটি খামার লোন প্রকল্প থেকে।দরকার শুধু সঠিক প্রশিক্ষন আর কর্মদক্ষতার।তাই সরকারকে প্রশিক্ষন ও দক্ষতা তৈরির ক্ষেত্রেও নজর দিতে হবে।তবেই আমাদের বাংলাদেশ হবে ক্ষুধামুক্ত ও দারিদ্রমুক্ত।

 

শেষ কথা, আশা করি আজকের পোস্টটি যারা পড়েছেন তারা একটি খামার একটি বাড়ি লোন পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। তারপরেও যদি এই বিষয়ে কোন ধরনের প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাতে পারেন। 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button