ইসলামী ব্যাংক প্রবাসী লোন পদ্ধতি।islami bank probashi loan
ইসলামী ব্যাংক প্রবাসী লোন পদ্ধতি জানতে হলে আগে বুঝতে হবে কেন এই লোন দিচ্ছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। বাংলাদেশের নাগরিকদের সুবিধার্থে একমাত্র হালাল ও ইসলামী শরিয়া মেনে লোন দেয় ইসলামি ব্যাংক। সুদ ছাড়া প্রতিটি ব্যাংক অচল হলেও ইসলামী ব্যাংক তাদের প্রবাসী লোন পদ্ধতিতে রেখেছে বিশেষত্ব। তবে ইসলামী ব্যাংক বিষয়টিকে সরাসরি লোন হিসাবে বিবেচিত না করে বিশেষ এই অর্থ সহায়তাকে তারা ইনভেস্টমেন্ট বা বিনিয়োগ বলে থাকে।
ইসলামী ব্যাংক প্রবাসী লোন পদ্ধতি
বাংলাদেশের অন্যসব ব্যাংকের ন্যায় ইসলামী ব্যাংকও প্রবাসীদের বিশেষ এই লোন সুবিধা প্রদান করে থাকে। আর তাই প্রবাসী লোন নিতে হলে আপনাকে ইসলামী ব্যাংক প্রবাসী লোন পদ্ধতির আবেদনপত্র প্রথমে ইসলামী ব্যাংকের যেকোন শাখা থেকে সংগ্রহ করতে হবে।
বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষই ইসলামী ব্যাংক প্রবাসী লোন নিতে আগ্রহী। কারন হিসেবে বলা যায় ইসলামী ব্যাংক তাদের প্রবাসী লোন এর মধ্যে অনেক সুবিধা রেখেছে। আবার অন্যদিক বিবেচনায় এই ব্যাংক হালাল ও ইসলামী শরিয়া ভাবে লোন প্রদান করে থাকে।
ইসলামী ব্যাংক প্রবাসী লোন পেতে কিভাবে আবেদন করবেন
১.জন্ম নিবন্ধন কিংবা ভোটার আইডি কার্ড আবেদন পত্র পূরণের আগে সামনে রাখতে হবে।
২.উপরে বলা পদ্ধতি অনুযায়ী আবেদনপত্র সংগ্রহ করে সঠিক তথ্য সেটি সম্পূর্ণ পূরণ করতে হবে।
৩.আবেদনপত্রটি পূরণ করা হয়ে গেলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এটাচ করে সম্পূর্ণ আবেদনপত্রটি ইসলামী ব্যাংকে জমা দিতে হবে।
৪.লোন প্রত্যাশার আবেদনপত্রের সঙ্গে অবশ্যই আপনার পাসপোর্টের ফটোকপি এবং ভিসার ফটোকপি এটাস্ট করতে ভুলবেন না। প্রয়োজনে অন্যান্য বিষয়ে জানার প্রয়োজন থাকলে এই নাম্বারে ফোন করতে পারেন, 09611016259
৫.ইসলামী ব্যাংকের যেকোনো শাখায় যাওয়ার আগে মনে করে অবশ্যই আপনার এনআইডি কার্ড এর ফটোকপি এবং দুই কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি সহ আপনার পাসপোর্ট এর ফটোকপি এবং ভিসার ফটোকপি সাথে নিয়ে যেতে ভুলবেন না। সেইসাথে আপনার নমিনির প্রয়োজনীয় কাগজ ও তথ্যগুলো অবশ্যই সঙ্গে নিয়ে যাবেন ব্যাংকে।
৬.কিছুদিনের মধ্যেই আপনার সেই আবেদন পত্রের যাবতীয় তথ্য যাচাই বাছাই শেষে আপনাকে লোন দেওয়ার অনুমতি প্রদান করবে ইসলামী ব্যাংক।
সবশেষে কোন কিছু বুঝতে অসুবিধা হলে বা কিছু জানার প্রয়োজনে ফোন করতে পারেন ব্যাংকের হেল্পলাইন নাম্বারে। নাম্বার: ১৬২৫৯/০৯৬১১০১৬২৫৯।
ইসলামী ব্যাংক প্রবাসী লোন এর উদ্দেশ্য
IBBL এর এই লোনের বেশকিছু উদ্দেশ্য রয়েছে। সেগুলো হলো,
➡️দেশের বাইরে থাকা রেমিট্যান্স যোদ্ধা প্রবাসীদের ( NRBs ) এর অধীনে বিনিয়োগ সুবিধার সম্প্রসারণ এবং ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ এর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আদান-প্রদান করে।
➡️বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসীদের বৈদেশিক রেমিট্যান্স প্রদানে উৎসাহিত করা এবং দেশের অর্থ পাচার বন্ধ করা।
➡️ আমাদের সমাজের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যাক্তাদের (এসএমই) বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে এ লোন দেওয়া হয়।
➡️মানুষের দারিদ্র্য বিমোচন এবং হাড় ভাঙা পরিশ্রম করে ডলার পাঠানো প্রবাসী উন্নয়নকে উৎসাহিত করা।
➡️বাংলাদেশে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা।
➡️দীর্ঘ বিদেশ যাত্রা শেষে সকল প্রবাসী এবং তাদের সন্তানদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা।
➡️প্রবাসীদের জীবন যাত্রার মান উন্নত করা।
কিভাবে ইসলামী ব্যাংক প্রবাসী লোন পাবেন
বাংলাদেশের যেসব নাগরিক শ্রমিক ভিসায় দীর্ঘদিন দেশের মায়া ত্যাগ করে বিদেশে বসবাস করেন তারাই এই ইসলামী ব্যাংক প্রবাসী লোন নিতে পারবেন। তবে লোন পাওয়ার ক্ষেত্রে লোন প্রার্থী যে দেশে বসবাস করেন তার সে দেশের ভিসা ও পাসপোর্ট থাকতে হবে, যা কিনা যেকোনো সময় প্রদর্শন যোগ্য।
লোন প্রার্থী বিদেশের যে কোম্পানীতে চাকরি করেন ঐ কোম্পানীর বেতন রশিদ,নিয়োগ পত্রের পাশাপাশি অন্য প্রয়োজনীয় সব ডুকুমেন্ট সাথে আনতে হবে।
ইসলামী ব্যাংক আর কোন খাতে লোন দেয়
বাংলাদেশের জনপ্রিয় ‘ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড’ ইসলামী শরিয়া মোতাবেক বিভিন্ন খাতে লোন বা বিনিযোগ করে থাকে। সেগুলো নিচে দেওয়া হলো।
১. ডাক্তার লোন স্কিম (ISD)
২. মাইক্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লোন স্কিম (MIIS)
৩.হাউস হোল্ড লোন স্কিম
৪.কৃষি বাস্তবায়ন লোন স্কিম (AIIS)
৫.গাড়ী লোন স্কিম (CIS)
৬. রিয়েল এস্টেট লোন প্রোগ্রাম (REIP)
৭. ট্রান্সপোর্ট লোন স্কিম (TIS)
৮. রিয়েল এস্টেট লোন (বাণিজ্যিক এবং কার্যকরী মূলধন)
৯. উদ্যোক্তা লোন স্কিম (NEIS)
১০. ইসলামী ব্যাংক কৃষি লোন
১১. মহিলা উদ্যোক্তা লোন স্কিম (WEIS)
১২. ছোট ব্যবসা লোন স্কিম (SBIS)
১৩. প্রবাসী লোন(এনআরবি)
বিশেষ এই ইসলামী ব্যাংক প্রবাসী লোন কারা পাবেন
উপকারী এই লোন পাওয়ার ক্ষেত্রে যে সকল প্রবাসী ইসলামী ব্যাংকের সাথে নিয়মিত টাকা লেনদেন করে তাদের জন্য বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। তবে সবদেশের শ্রমিক বা কর্মজীবী প্রবাসীই ইসলামী ব্যাংক প্রবাসী লোন পেতে পারেন। সবশেষে এই প্রবাসী লোন পাওয়ার জন্য কমপক্ষে দুই জন আত্মীয় গ্যারান্টার বা জিম্মাদার থাকতে হবে এবং তাদের উভয়কেই আর্থিকভাবে বেশ স্বাভলম্বী হতে হবে।
ইসলামী ব্যাংকের লোন এবং প্রচলিত ব্যাংকিং লোনের মধ্যে পার্থক্য কি
বাংলাদেশে সম্প্রতি প্রচলিত ধারার বেশ কিছু ব্যাংকে ইসলামী ধারার অর্থব্যবস্থাকে সম্মান জানিয়ে ব্যাংকগুলোতে একটি বিশেষ ইসলামিক ব্যাংকিং ‘উইণ্ডো’ খোলা হয়েছে। ইসলামী ব্যাংকিং এবং অন্যসব পুজিবাদি ধারার প্রচলিত ব্যাংকিং এর মধ্যে মূল পার্থক্যটা তাহলে কোথায়! এ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের শিক্ষক তাসনিমা খান জানান, দুই ধারার ব্যাংকগুলোর মূল পার্থক্যের জায়গাটা হচ্ছে সুদ এবং মুনাফার হিসেবের ক্ষেত্রে।
তাসনিম খান জানান “মূল ধারার সব ব্যাংকিংয়ে সুদের বা ইন্টারেস্টের বিষয়টা থাকে।তবে আমরা যখন ব্যাংকে টাকা জমা রাখি তখন একটা নির্দিষ্ট হারে কিন্তু সুদ দেয়াই হচ্ছে। পরিশেষে সেখানে ব্যাংকের লাভ বা ক্ষতি যাই হোক আমরা যারা সেখানে টাকা জমা রাখছি আমাদের কাছে কিন্তু ব্যাংকের লাভ-লস বিবেচ্য বিষয় হয় না। ইসলামী মূল-ধারার ব্যাংকগুলো পিএলএস অর্থাৎ’প্রফিট-লস-শেয়ারিং’ এ চলে, কিন্তু ট্র্যাডিশনাল ব্যাংক বা প্রচলিত ব্যাংকে এটা একটা স্টেটেড রেট থাকে। তবে “ইসলামের ক্ষেত্রে বলা হয়ে থাকে ব্যাংকিং এর সেক্টরটা একটা শেয়ারিং মেথড হবে।
ইসলমী ব্যাংকে এই ‘প্রফিট-লস-শেয়ারিং’ বিদ্যামান। অর্থাৎ ব্যাংক যেহেতু আমাদের কাছ থেকে আমানত রাখছে, তাই ব্যাংকের যদি লাভ হয় তাহলে আমার আমানতের উপর লভ্যাংশ পেতে পারি। কিন্তু ব্যাংকের যদি ইনভেস্টে ক্ষতি হয় তাহলে আমরা লভ্যাংশ পাওয়ার জন্য যোগ্য হব না। এটাই প্রচলিত এবং ইসলামী ধারা ব্যাংকের মধ্যে মূল পার্থক্য”। যেহেতু ইসলামে সুদকে হারাম বলা হয়ে থাকে তাই ব্যাংকিং সিস্টেমের এই ফারাক সবার কাছেই অনেকটা গ্যাম্বলিং এর মত”।
ইসলামী ব্যাংক কেন দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে?
ইসলামী ব্যাংকের প্রবাসী লোন পদ্ধতি দিন দিন ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করছে। অন্যদিকে
বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষের যে চিন্তা-ধারা সেটাতে সবাই মনে করে তার জমাকৃত এই টাকাটা বিনিয়োগ করা হচ্ছে এবং সেখান থেকে সে মুনাফা রিটার্ন পাচ্ছেন। অর্থাৎ মানুষ এটাকে গ্যাম্বলিং মনে করছেনা। আর তাই ব্যাংক থেকে মুনাফার সেই অর্থটাকে তারা বৈধ হিসেবে মনে করে।
আর ঠিক এখানেই মানুষের একটা মানসিক স্বস্তির জায়গা তৈরি করে। ঠিক এ কারণেই প্রচলিত ব্যাংকগুলো তাদের সিস্টেমে ইসলামী উইনডো ও শাখা রাখছে ইসলামী ব্যাংকিং সিস্টেমের।
শেষকথা
গ্রাহক সংখ্যা কিংবা অন্যান্য সুবিধাদীর দিক দিয়ে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ব্যাংক। এই ব্যাংকিং সিস্টেমে যে কেউ চাইলে বিদেশে বসেও এখান থেকে প্রবাসী লোন নিতে পারবেন। তাই আশা করি এতোক্ষণে আপনারা নিশ্চয়ই ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রবাসী লোন নেওয়ার পদ্ধতি এবং কোন খাতে লোন দেওয়া হয় তা বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। দারিদ্র্য বিমোচন ও বিদেশে থাকা প্রবাসীদের কল্যাণে ইসলামী ব্যাংকের প্রবাসী লোন দারুন কার্যকরি একটি লোন পদ্ধতি। ব্যাংকিং সেক্টরের লোন কিংবা জমা সম্পর্কিত তথ্য নিয়মিত পেতে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন।