অনলাইন ট্রিক

ই পাসপোর্ট করার নিয়ম ও খরচ

 

ই পাসপোর্ট হচ্ছে পাসপোর্ট এর ডিজিটাল রূপ। গ্রাহকদের জন্য ই পাসপোর্ট ব্যবহারের রয়েছে উন্নত সেবা।ই পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিদেশ ভ্রমণ থেকে শুরু করে অনেক ধরনের গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে পারবেন। তাছাড়া ই পাসপোর্ট ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমেই করা যায় কোন ধরনের ভোগান্তি ছাড়াই। আজকের পোস্টে ই পাসপোর্ট কি, ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে, ই পাসপোর্ট করার নিয়ম ও খরচ নিয়ে আলোচনা করা হবে।তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাকঃ-

 

ই পাসপোর্ট কি?

 

বর্তমান বাংলাদেশ আগের এনালগ সময় থেকে বেরিয়ে এসে ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করছে।তার অন্যতম একটি হচ্ছে e-passport ।ই পাসপোর্ট কি হচ্চে বর্তমান এমআরপি বা যেটি যন্ত্রের সাহায্যে পাঠ করা যায়।আগের পাসপোর্ট এর মতো এটাও একই থাকবে।তবে আগের পাসপোর্টে যে প্রথম দুটি পাতায় তথ্য দেওয়া থাকতো ই পাসপোর্টে সেটি থাকবে না।বরং সে জায়গায় থাকবে পলিমারের তৈরি একটি কার্ড আর অ্যান্টেনা।সেই কার্ডে একটি চিপ থাকবে যার ভেতরে সেই ব্যাক্তির সব রকমের তথ্য সংযুক্ত থাকবে।

 

ই পাসপোর্ট করার নিয়ম ও খরচ?

 

ই পাসপোর্ট করার সময় ব্যাক্তিকে অবশ্যই তাঁর নাম, জন্ম তারিখ, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা, পেশা, জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বার, পূর্ববর্তী পাসপোর্টের তথ্য (যদি থাকে), পিতা-মাতার নাম ও পেশা, যোগাযোগ নাম্বার ও জরুরি ক্ষেত্রে যোগাযোগ নাম্বার দিতে হবে।পেমেন্ট সেকশনে গিয়ে আবেদনের ফি বাবদ টাকা পরিশোধ করতে হবে।তবে ই পাসপোর্ট আবেদনের সময় খুব ভালোকরে খেয়াল রাখতে হবে যেন একবার চূড়ান্তভাবে জমা করার পর আবেদনপত্র আর পরিবর্তন করা যাবে না।একটি জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে এক ব্যাক্তি মাত্র একবার আবেদন করতে পারবেন।

 

আবেদনের সময় যেন সব তথ্য জাতীয় পরিচয়পত্রের আলোকে দেয়া হয়।যদি কোন কিছুর অমিল হয়ে থাকে তাহলে আর ই পাসপোর্ট পাওয়া যাবে না।চুড়ান্তভাবে আবেদন শেষ করার পর সবশেষে দিনপঞ্জিকা নির্ধারিত দিনপঞ্জি থেকে বায়োমেট্রিকের জন্য সাক্ষাতের দিনক্ষণ ঠিক করে নিতে হবে।অনলাইন আবেদন শেষ হলে আবেদন ফরমটি ও বায়োমেট্রিকের জন্য সাক্ষাতের সময়সহ ডাউনলোড করে রেখে দিতে হবে এবং তা প্রিন্ট করে রেখে দিলে ভালো হয়।

 

ই পাসপোর্ট করার জন্য কি কি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র লাগবে?

 

কোন দালাল ছাড়াই খুব সহজে ই পাসপোর্টের আবেদন করা যায়।প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকলে ঘরে বসে আপনি খুব সহজে কোন ঝামেলা ছাড়াই আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্য করতে পারেন।ই পাসপোর্টের আবেদনের জন্য প্রথমে আবেদন পত্র পূরন করতে হবে।অথবা পিডিএফে ফরমেটে ডাউলোড করেও ফরম পূরণ করা যাবে।

 

নতুন ই-পাসপোর্ট করতে হলে কিছু কাগজ সংশ্লিষ্ট পাসপোর্ট অফিসে জমা দিতে হয়। সেগুলো হলো-এনআইডি অথবা স্মার্ট কার্ডের ফটো কপি, পরিচয়পত্রের মূল কপি অধিদপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে দেখাতে হবে। ১৮ বছরের কমবয়সীদের জন্য জন্ম-নিবন্ধন সার্টিফিকেট, বাবা-মায়ের ছবি ও এনআইডি’র কপি জমা দিতে হয়। 

 

ই-পাসপোর্ট পোর্টালে বলা হয়েছে,সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য জমা দিতে হবে  অনাপত্তিপত্র-এনওসি এবং অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ অবসরের প্রমাণপত্র হিসেবে পেনশন দলিল দেখানোর কথা বলা হয়েছে।তাছাড়াও প্রয়োজনে বিবাহনামা বা তালাকানাম প্রযোজ্য হবে।

 

ই পাসপোর্ট কতদিনে পাওয়া যায়? আসুন জেনে নেই ই পাসপোর্ট পেতে কতো দিন সময় লাগে

 

ই পাসপোর্ট মূলতো ৪৮ এবং ৬৪ পাতার হয়ে থাকে।আবার এই ই পাসপোর্ট তিন প্রকারের হয়।যেমনঃযেমন- ‘অতি জরুরি’, ‘জরুরি’ ও ‘সাধারণ’। পাঁচ বছর ও ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্টের জন্য ভিন্ন ভিন্ন হারে ফি জমা দিতে হবে।

 

৫ বছর মেয়াদি ই পাসপোর্টঃ

 

১. ৪৮ পাতার ‘অতি জরুরি পাসপোর্ট’ দুদিনে পেতে আপনাকে ফি দিতে হবে ৭ হাজার ৫০০ টাকা।

২. ৪৮ পাতার ‘জরুরি পাসপোর্ট’ সাত দিনে পেতে আপনাকে ফি দিতে হবে ৫ হাজার ৫০০ টাকা।

৩. ৪৮ পাতার ‘সাধারণ পাসপোর্ট’ ১৫ দিনে পেতে আপনাকে ফি দিতে হবে ৩ হাজার ৫০০ টাকা।

 

১০ বছর মেয়াদি ই পাসপোর্টঃ

 

১. ৪৮ পাতার ‘সাধারণ পাসপোর্ট’ ১৫ দিনে পেতে আপনাকে ফি দিতে হবে ৫ হাজার টাকা।

২. ৪৮ পাতার ‘জরুরি পাসপোর্ট’ সাত দিনে পেতে আপনাকে ফি দিতে হবে ৭ হাজার টাকা।

৩.৪৮ পাতার পাসপোর্ট যদি দুই দিনের মধ্যে নিতে চান তাহলে আপনাকে খরচ করতে হবে ৯ হাজার টাকার মতো।

 

৫ বছর মেয়াদি ই পাসপোর্টঃ

 

১. ৬৪ পাতার ‘সাধারণ পাসপোর্ট’ ১৫ দিনে পেতে আপনাকে  ফি দিতে হবে ৫ হাজার ৫০০ টাকা।

২. ৬৪ পাতার ‘জরুরি পাসপোর্ট’ সাত দিনে পেতে আপনাকে ফি দিতে হবে ৭ হাজার ৫০০ টাকা।

৩. ৬৪ পাতার ‘অতি জরুরি পাসপোর্ট’ দুদিনে পেতে আপনাকে ফি দিতে হবে ১০ হাজার ৫০০ টাকা।

 

১০ বছর মেয়াদি ই পাসপোর্টঃ

 

১. ৬৪ পাতার ‘সাধারণ পাসপোর্ট’ ১৫ দিনে পেতে আপনাকে ফি দিতে হবে ৭ হাজার টাকা।

২. ৬৪ পাতার ‘জরুরি পাসপোর্ট’ সাত দিনে পেতে আপনাকে ফি দিতে হবে ৯ হাজার টাকা।

৩. ৬৪ পাতার ‘অতি জরুরি পাসপোর্ট’ দুদিনে পেতে আপনাকে ফি দিতে হবে ১২ হাজার টাকা।

 

তবে এই ফি এর সাথে ১৫% ভ্যাট আপনাকে জমা দিতে হবে।এটা সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই তাদের মা বাবার জাতীইয় পরিচয় পত্রের নাম্বার উল্লেখ করতে হবে।পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে অথবা চুরি হলে আপনার  নিকটস্থ থানায় জানাতে হবে। নতুন পাসপোর্টের ক্ষেত্রে পুরাতন পাসপোর্টের ফটোকপি, জিডি কপিসহ আবেদন দাখিল করতে হবে।

 

ই পাসপোর্টের সুবিধা ও ই পাসপোর্ট কত ধরনের 

 

ই পাসপোর্টের সুবিধা হলো খুব সহজে কোন দালাল বা ঝামেলা ছাড়াই আপনি এর আবেদন থেকে শুরু করে বাকি সব কাজ সম্পন্য করতে পারবেন।তাছাড়া আপনি খুব দ্রুত এবং সহজে যাতায়াত করতে পারবেন।ই গেইট ব্যাবহার করে সহজে যাতাযাত করতে পারবেন তাই আপনাকে আর লাইনে দাড়িয়ে থেকে অপেক্ষা করতে হবে না বা আপনার সময় নস্ট হবে না।যে সকল ভ্রমনকারীরা ই পাসপোর্ট ব্যবহার করবেন তারা যাতায়াতের কারনে ভিসা চেকিং করতে লাইনে দাড়াতে হবে না।ই-গেটের নির্দিষ্ট স্থানে পাসপোর্ট রেখে আপনি দাঁড়ালে ক্যামেরা ছবি তুলে নিবে। সাথে থাকবে ফিঙ্গারপ্রিন্ট যাচাইয়ের ব্যবস্থাও। সব ঠিক থাকলে আপনি  ইমিগ্রেশন পেরিয়ে যেতে পারবেন।তবে কোন সমস্যা থাকলে লাল বাতি জলে উঠবে।তখন সেখানে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা হস্তক্ষেপ করবেন।

 

 

যদি কারো বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা থাকে, সেটিও সঙ্গে সঙ্গে জানা যাবে।ন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশন (আইসিএও) এই পিকেডি পরিচালনা করে। ফলে ইন্টারপোলসহ বিমান ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ এসব তথ্য যাচাই করতে পারে।

 

এখানে ৩৮টি নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য থাকায় এ ধরণের পাসপোর্ট জাল করা সহজ নয়।

 

বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের পরিচালক মোহাম্মদ আবু সাঈদ বলেন, প্রথমে পাসপোর্ট ছিল তিন ধরনের। অর্ডিনারি বা সাধারণ পাসপোর্ট, স্পেশাল বা বিশেষ পাসপোর্ট এবং ডিপ্লোম্যাটিক বা কূটনৈতিক পাসপোর্ট।

 

বিশেষ পাসপোর্ট কেবলমাত্র ভারতে যাবার জন্য ইস্যু করা হতো বলে সেটি ইন্ডিয়ান পাসপোর্ট নামেও পরিচিত ছিল। 

 

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পাসপোর্টের রঙ ভিন্ন ভিন্ন হয়।তবে সাধারনতো লাল নীল সবুজ আর কালো এই তিন প্রকারের ডের হয়।

 

সবুজ পাসপোর্ট

 

জন্ম ও বৈবাহিক উভয় সূত্রে বাংলাদেশের সব নাগরিকের জন্য সবুজ পাসপোর্ট। এই রঙের পাসপোর্টে বিদেশে গমনের জন্য সংশ্লিষ্ট দেশের ভিসার প্রয়োজন হয়।

 

নীল পাসপোর্ট

 

নীল রঙের পাসপোর্টকে বলা হয় অফিসিয়াল পাসপোর্ট। সরকারি কাজে কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী দেশের বাইরে ভ্রমণ করতে হলে এই অফিসিয়াল পাসপোর্ট ব্যবহার করা হয়।নীল পাসপোর্টধারী ব্যাক্তিরা ১৭ দেশে বিনা ভিসায় ভ্রমন করতে পারেন।

 

লাল পাসপোর্ট

 

লাল পাসপোর্টকে বলা হয় ডিপ্লোম্যাটিক বা কূটনৈতিক পাসপোর্ট। এই পাসপোর্ট পাবেন রাষ্ট্রপ্রধান, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য এবং তাদের স্পাউস অর্থাৎ স্বামী বা স্ত্রী।

 

এ ছাড়া উচ্চতর আদালতের বিচারপতি, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের প্রধান, মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং বিদেশে বাংলাদেশি মিশনের কর্মকর্তারা লাল পাসপোর্ট পান।লাল পাসপোর্ট যাদের আছে, তাদের বিদেশ ভ্রমণের জন্য কোনো ভিসা প্রয়োজন হয় না। তারা সংশ্লিষ্ট দেশে অবতরণের পর অন-অ্যারাইভাল ভিসা পান।

 

ইলেক্ট্রনিক পাসপোর্ট বা ই পাসপোর্টের যুগে প্রবেশ করলো বাংলাদেশ।বাংলাদেশে ২২ জানুয়ারি থেকে চালু হয়েছে ই-পাসপোর্ট বিতরণ কর্মসূটি। ই-পাসপোর্ট চালু হলেও বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য আগের মতোই তিন রঙের পাসপোর্ট চালু থাকবে।

 

শেষ কথা, আশা করি আজকের পোস্টটি যারা পড়েছেন তারা ই পাসপোর্ট কি ও ই পাসপোর্ট করার জন্য কি কি লাগে এই বিষয়ে মোটামুটি ধারণা পেয়েছেন। তারপরেও যদি ই পাসপোর্ট বিষয় সম্পর্কিত কোন ধরনের প্রশ্ন থেকে থাকে বা পোস্টটি পড়ে কোন বিষয় সম্পর্কে বুঝতে অসুবিধা হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ। 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button