ভিসা খবর

জার্মানি যাওয়ার সহজ উপায়।জার্মানি ভিসা খরচ

জার্মানি ইউরোপ মহাদেশের একটি দেশ।অর্থনৈতিক দিক দিয়ে বিবেচনা করলে জার্মানি অনেকটা শক্তিশালী একটি দেশ। ইউরোপের উন্নত দেশগুলোর মধ্যে জার্মানি অন্যতম।অনেকের জার্মানি গিয়ে কাজ করার স্বপ্ন থাকে। আজকের পোস্টে জানাবো জার্মানি যাওয়ার উপায়, জার্মানি ভিসা খরচ ও জার্মানি যাওয়ার জন্য কি কি লাগে। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক:-

 

জার্মানি ভিসা আবেদন করার নিয়ম

 

জার্মানি যেতে হলে অবশ্যই জার্মানি ভিসার প্রয়োজন হবে। বৈধ ভিসা ছাড়া কোন ব্যক্তি চাইলেও জার্মানি যেতে পারবেন না। জার্মানি যাওয়ার জন্য অনেক ধরনের ভিসা দেওয়া হয়ে থাকে। যেমন:-

 

➡️জার্মানি ট্যুরিস্ট ভিসা 

➡️জার্মানি স্টুডেন্ট ভিসা 

➡️জার্মানি কাজের ভিসা 

 

এই তিন ধরনের ভিসার আবেদন পদ্ধতি ভিন্নরকম। সর্বপ্রথম জার্মানি যাওয়ার জন্য ভিসা সিলেক্ট করতে হবে অর্থাৎ কোন ভিসার মাধ্যমে জার্মানি যেতে চান।

 

জার্মানি টুরিস্ট ভিসা 

 

জার্মানিতে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে যারা যেতে চান তাদেরকে জার্মানি টুরিস্ট ভিসা নিতে হবে। জার্মানি টুরিস্ট ভিসাকে অনেকে ভিজিট ভিসা হিসেবে চিনে থাকেন। জার্মান টুরিস্ট ভিসা পেতে ১৫ দিনের মতো সময় লেগে থাকে। সরাসরি জার্মান দূতাবাস থেকে টুরিস্ট ভিসার জন্য আবেদন করা যাবে। 

 

জার্মানি স্টুডেন্ট ভিসা 

 

ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য জার্মান সরকার জার্মানি স্টুডেন্ট ভিসা সুবিধা দিচ্ছে। যদি কেউ পড়াশোনা করতে জার্মানি যেতে চান তাহলে সরাসরি জার্মানি স্টুডেন্ট ভিসা নিতে পারেন। জার্মানি স্টুডেন্ট ভিসায় গিয়ে সেখানে পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করে ভালো টাকা ইনকাম করা যাবে। জার্মানি স্টুডেন্ট ভিসার জন্য যদি আবেদন করেন তাহলে 25 থেকে 30 দিনের মধ্যে ভিসাটি হাতে পাওয়া যায়। জার্মানি স্টুডেন্ট ভিসার মেয়াদ সাধারণত তিন মাস হয়ে থাকে। 

 

জার্মানি কাজের ভিসা /জার্মানি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা 

 

জার্মানিতে অনেক সময় কাজের জন্য দক্ষ জনবল প্রয়োজন হয়ে থাকে। তখন জার্মান সরকার কাজের ভিসা চালু করে থাকে। বাংলাদেশিরা চাইলে জার্মানি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিতে পারবে বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত যে কোন এজেন্সির মাধ্যমে। জার্মানিতে গিয়ে ভালো কাজের পাশাপাশি ভালো বেতন পাওয়া সম্ভব।নিচে জার্মানি ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় যেতে কেমন যোগ্যতা থাকা উচিত তা উল্লেখ করা হলো:

 

➡️জার্মানিতে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় যাওয়ার আগে নির্দিষ্ট কাজের ওপর দক্ষতা থাকতে হবে। 

➡️নির্দিষ্ট কাজের উপরে প্রশিক্ষণ সনদ থাকতে হবে। 

➡️এনআইডি কার্ডের ফটোকপি থাকতে হবে। 

➡️আই এলটিএস সম্পূর্ণ করতে হবে। 

➡️চেয়ারম্যান কর্তৃক সনদপত্র ও বাবা মায়ের এনআইডি কার্ডের ফটোকপি লাগবে। 

 

এই সকল ডকুমেন্টগুলো জার্মানিতে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে যেতে হলে লাগবে। তাছাড়া জার্মানিতে যদি ওয়ার্ক পারমিট বা কাজের ভিসা নিয়ে যেতে চান তাহলে আপনাকে ন্যূনতম এসএসসি পাস করতে হবে। তাছাড়া জার্মান ভাষায় অভিজ্ঞতা অর্জন করে তারপরে জার্মানিতে যেতে হবে। 

 

জার্মানিতে কাজের বেতন কত 

 

জার্মানিতে একজন কর্মীর বেতন কত টাকা দেওয়া হয়ে থাকে এই নিয়ে অনেকের জানার আগ্রহ রয়েছে। জার্মানিতে একজন কর্মী সর্বনিম্ন ২ লাখ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত বেতন পেয়ে থাকেন। অর্থাৎ তারা সর্বনিম্ন মাসিক ২ লাখ টাকা পর্যন্ত বেতন পান। যারা ছাত্রছাত্রী রয়েছেন জার্মানিতে পড়াশোনা করার পাশাপাশি পার্ট টাইম কাজ করেও মাসে এক লক্ষ টাকার ওপরে ইনকাম করতে পারবেন। জার্মানিতে মোট কাজের সময় দেওয়া হয় ৮ ঘন্টা এবং এই টাইমের মধ্যেই অনেকে মাসে দুই থেকে তিন লাখ টাকা ইনকাম করে নেয়। কেউ যদি পার্ট টাইম কাজ করে থাকে তাহলে তার বেতন আরও বাড়বে।

 

জার্মানিতে কোন কাজের চাহিদা বেশি 

 

জার্মানিতে বর্তমানে প্রচুর বাংলাদেশী কাজ করে থাকেন। জার্মানিতে দক্ষ কাজের লোকের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। জার্মানিতে বর্তমানে যে সকল কাজগুলোর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু কাজ দেওয়া হলো:-

 

➡️ড্রাইভিং 

➡️মেকানিক্যাল 

➡️সিকিউরিটি গার্ড 

➡️ফুড প্যাকেজিং 

➡️শপিং মল 

➡️নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার 

➡️পরিছন্নতা কর্মী 

➡️ক্লিনিং ম্যান 

 

অর্থাৎ জার্মানিতে গেলে এই সকল কাজগুলো সম্পর্কে সর্বপ্রথম প্রশিক্ষণ নিয়ে যেতে হবে। নির্দিষ্ট কাজের বিষয়ে যদি প্রশিক্ষণ থেকে থাকে এবং আপনি যদি সেই সকল কাজের বিষয়ে খুবই দুঃখ হয়ে থাকেন তাহলে জার্মানিতে গিয়ে ভালো টাকা ইনকাম করতে পারবেন।

 

জার্মানিতে কোন ভিসায় যাওয়া সহজ 

 

অনেকেই জার্মানিতে কোন ভিসা নিয়ে গেলে খুবই দ্রুততম সময়ের মধ্যে যেতে পারবেন বা জার্মানিতে কোন ভিসা পাওয়া সহজ এই সম্পর্কে জানতে চান। বর্তমানে জার্মানিতে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়া সময়ের সাথে সাথে অনেক কঠিন হয়ে যাচ্ছে।তবে বাংলাদেশ থেকে কেউ চাইলে খুব সহজেই স্টুডেন্ট ভিসা অথবা জব ভিসার মাধ্যমে জার্মানিতে সহজে যেতে পারবেন।অনার্স অথবা মাস্টার্স শেষ করে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করে খুব সহজেই জার্মানি যাওয়া যাবে। তবে জার্মানিতে যাওয়ার আগে অবশ্যই ইংরেজি এবং জার্মান ভাষায় ভালো অভিজ্ঞ হয়ে যেতে হবে তাহলে সেখানে ভালো কিছু করা যাবে। ছাত্ররা চাইলে জার্মানিতে স্টুডেন্ট ভিসায় গিয়ে পার্ট টাইম কাজ করে ভালো টাকা ইনকাম করতে পারবেন। 

 

বাংলাদেশ থেকে জার্মানি যাওয়ার উপায় 

 

বাংলাদেশ থেকে আগে জার্মানি যেতে হলে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হতো। কিন্তু এখন যে কেউ চাইলে খুব সহজেই জার্মানিতে টুরিস্ট ভিসা কাজের ভিসা অথবা স্টুডেন্ট ভিসায় যেতে পারবেন। তবে এর জন্য আপনার কাছে প্রয়োজনীয় কিছু ডকুমেন্ট জার্মান দূতাবাস জমা নিয়ে তারপর ভিসা প্রদান করবে। পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয় পত্র,ব্যাংক স্টেটমেন্ট সহ যাবতীয় তথ্য নিয়ে সরাসরি জার্মান দূতাবাসে চলে যেতে হবে এবং কোন ধরনের ভিসা করতে চান সেই বিষয়ে তাদেরকে জানাতে হবে।

 

তারপর তাদের শর্তাদি অনুযায়ী সকল কাজ সম্পূর্ণ করার পর কিছুদিনের মধ্যে আপনার কাঙ্খিত জার্মান ভিসাটি পাবেন।এত ঝামেলায় যদি না যেতে চান তাহলে বাংলাদেশের অনেক ভিসা এজেন্সি রয়েছে যারা গ্রাহকদের কোন ধরনের ভোগান্তি ছাড়াই যে কোন দেশের ভিসা পাইয়ে দিয়ে থাকে। সরাসরি এই সকল এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করে জার্মানি ভিসা করে নিতে পারেন।

 

জার্মানি ভিসা করতে কি কি ডকুমেন্ট লাগে /জার্মানি ভিসা করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র 

 

জার্মানি ভিসার জন্য আবেদন করতে হলে অর্থাৎ আপনাকে যদি জার্মানিতে জব ভিসার মাধ্যমে যেতে হয় তাহলে কিছু ডকুমেন্ট জমা দেওয়া লাগবে। জার্মান দূতাবাসে এই সকল কাগজপত্র জমা দেওয়ার পর তারা কোম্পানির কাছে এগুলো পাঠাবে এবং কোম্পানির সকল কিছু যাচাই-বাছাই করে যদি সবকিছু ঠিকঠাক পায় তাহলে আপনাকে জব ভিসার জন্য যোগ্য মনে করে ভিসাটি প্রদান করবে।নিচে জার্মানি যাওয়ার জন্য কি কি ডকুমেন্ট বা কাগজপত্র লাগে তা দেওয়া হলো:

 

➡️দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি লাগবে।

➡️সর্বনিম্ন ৬ মাস মেয়াদ রয়েছে এরকম একটি ভ্যালিড পাসপোর্ট থাকতে হবে।

➡️নিজের আইডি কার্ডের ফটোকপি ছাড়াও বাবা মার আইডি কার্ডের ফটোকপি লাগবে। 

➡️নির্দিষ্ট কাজের উপর দক্ষতা লাগবে।

➡️ছয় মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট লাগবে এবং চেয়ারম্যান কর্তৃক সত্যায়িত সনদ প্রয়োজন হবে।

➡️জার্মান দূতাবাসে সত্যায়িত করা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠাতে হবে।

➡️জার্মান দূতাবাস থেকে আবেদন ফরম সংগ্রহ করে সেটি পূরণ করতে হবে।

 

উপরে যে সকল কাগজপত্রের কথা বলা হয়েছে এগুলো সব সংগ্রহ করে তারপরে জার্মান ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। আর যদি কোন কিছুতে ভুল-ত্রুটি হয়ে থাকে তাহলে সেটা সংশোধন করে আবার পরবর্তীতে আবেদন করতে হবে। 

 

জার্মানি ভিসা প্রসেসিং হতে কতদিন সময় লাগে 

 

অনেকেই জার্মানি ভিসা প্রসেসিং হতে কতদিন সময় লাগে এই নিয়ে জানতে চান। জার্মানি ভিসা প্রসেসিং হতে সাধারণত ২৫ থেকে ৩০ দিনের মতো সময় লেগে থাকে। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে সময়টা আরো বেশি হতে পারে।

 

জার্মানি যেতে কত টাকা লাগে /জার্মানি ভিসা খরচ 

 

জার্মানি যেতে কত টাকা লাগে বা জার্মানিতে কোন ভিসার জন্য বর্তমানে কত টাকা নেওয়া হচ্ছে এই নিয়ে অবশ্যই পরিপূর্ণ ধারণা থাকা জরুরী। জার্মানিতে কাজের ভিসা বা ওয়ার্ক পারমিট ভিসার মাধ্যমে যারা যেতে চান তাদের খরচ হবে ৮ থেকে 12 লক্ষ টাকার মত।স্টুডেন্ট ভিসার মাধ্যমে যদি কেউ জার্মানি যেতে চাই তাহলে তার ৫ লাখ টাকার মত খরচ আসবে। জার্মানিতে যখন আপনি থাকবেন প্রতি মাসে ৩০০ থেকে ৪০০ ইউরো আপনার বাড়তি খরচ হবে। থাকা খাওয়া ও হাত খরচ সহ সর্বোচ্চ মাসিক খরচ ৪০০ ইউরোর মধ্যে জার্মানিতে হয়ে যাবে।

 

আমাদের শেষ কথা 

 

আশা করি আজকের পোস্টটি যারা পড়েছেন তারা জার্মানি যাওয়ার উপায়, জার্মানি ভিসা খরচ,জার্মানি ভিসা পেতে কি কি ডকুমেন্ট লাগে এই সকল বিষয়গুলো সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা পেয়ে গিয়েছেন।তারপরেও যদি এই নিয়ে কোন ধরনের প্রশ্ন থেকে থাকে বা এই বিষয়ে আরো কিছু জানার থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ। 

সম্পর্কিত আর্টিকেল

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button